DinajpurBD

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পচে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের শত শত টন আলু

Posted February 9th, 2011 by |
no imahe

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পচে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের শত শত টন আলু

আমার দেশ,

০৯।০২।২০১১

জিএম হিরু, দিনাজপুর

গত আলু মৌসুমে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় হিমাগারে শত শত টন আলু ও আলুবীজ পচে নষ্ট হয়েছিল। সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্যই দিনাজপুরের প্রান্তিক আলু চাষীরা এবার নতুন উদ্যমে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছিলেন। চলতি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে হাটবাজারগুলো নতুন আলুতে সয়লাব হয়ে গেছে। পাশাপাশি আলুর বাজার দরে ধস নেমেছে।
প্রতি বছর আলু উত্পাদন মৌসুমে বৃহত্তর দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাজার হাজার টন আলু পচে যাচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন। চলতি আলু মৌসুমে বাজারে প্রচুর নতুন আলু ওঠায় আলুর বাজারে ধস নেমেছে। গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারগুলোতে খুচরা হিসেবে প্রতি কেজি আলু প্রকারভেদে ৪-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা পুঁজি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আলু চাষ করে এ জেলার প্রান্তিক চাষীরা যে লভ্যাংশ পান তা সাংসারিক কাজে ব্যয় করে মূলধন দিয়ে পরে একই আবাদি জমিতে গম চাষ করেন। কিন্তু সরকার আলুর মূল্য নির্ধারণ করে না দেয়ায় আলু উত্পাদন মৌসুমে বাজারে আলুর দাম ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, এতে প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এদিকে আলু কোল্ড স্টোরেজ করার জন্য পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকায় বা আলু যাতে পচে না যায়, সে ব্যাপারে কৃষকদের সম্মুখ জ্ঞান না থাকায় উত্পাদিত আলুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে কৃষকরা তার মূলধন খুইয়ে ফেলেন। এছাড়াও আলু চাষের সময় চড়া মূল্যে কৃষকদের বীজ কিনতে হয়। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ মহল মনে কওে, সরকারের উচিত বড় বড় হিমাগার নির্মাণ করে বিদ্যুত্ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি কৃষকদের আলু ও আলুবীজ সংরক্ষণের বিশেষ প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়া ।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সিকান্দার আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে আলু উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষকরা এবার অতিরিক্ত ৩ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করায় মোট ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় আলুর বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, এবারে বীজ, সার ও কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা অতি উত্সাহী হয়ে অতিরিক্ত জমিতে আলু চাষ করেছেন। এদিকে দিনাজপুরের বিভিন্ন হিমাগারের স্বত্বাধিকারীরা জানান, গত বছর বিদ্যুতের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রচুর পরিমাণ আলু পচে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেদিকে লক্ষ্য রেখে নিজস্ব বিদ্যুত্ ব্যবস্থার পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রান্তিক আলু চাষীরা পোকা, কুয়াশা ও বিভিন্ন রোগবালাই থেকে আলুর ক্ষেতকে রক্ষা করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিশেষ করে কুয়াশা ও পোকার তীব্র আক্রমণ থেকে আলুক্ষেত রক্ষার জন্য কোনো কোনো এলাকায় একরের পর একর আলুর জমিতে ন্যাটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলে ধানের পরই যে পরিমাণ আলু প্রতিবছর উত্পাদন হয়, তা এ অঞ্চলের খাদ্যচাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে আলু দিয়ে দেশে-বিদেশে নানা প্রকার ফাস্টফুড তৈরি করা হচ্ছে। এ কারণে আলুর চাহিদা রয়েছে, কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রান্তিক আলুচাষীরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই, সরকারও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।

https://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/02/09/67379